কোথা হতে এল এই মহাবিশ্ব? একটি
ছোট্ট প্রশ্ন-বিজ্ঞান যখন
স্বপ্রনোদিত হয়ে তার নিজের
কাছেই প্রশ্নটি করে বস্ল,তখন হতাস
হয়ে বলতে হল জানিনা! এত
কালের সমগ্র অহংকার বিচূর্ণ হয়ে
যেন ধুলায় মিশে গেল। তার পরেও
মুখ মুছে আমতা আমতা করে বলতে
বাধ্য হল-আপনা আপনি সৃষ্টি
হয়েছে এই বিশ্ব সংসার-যেন
ব্যঙের ছাতা। হায় দূর্ভাগ্য! ছোট্ট
একটি জবাব,জানা উত্তর, দিতে
গিয়েও জীব আড়ষ্ট হয়ে যায়!
অহঙ্কারের কাছে আত্মসমর্পন? না এ
সম্ভব নয়! মিথ্যে দিয়ে হলেও এই
প্রবঞ্চনা হতে পরিত্রান পেতে
হবে! কিন্তু পরিত্রান মেলেনা।
নিজের উত্তর নিজের কাছেই
বুমেরাং হয়ে ফিরে। আপনা
থেকে কি করে সম্ভব-এ প্রশ্ন যে
অন্তর্দাহে ফেলে! তবুও স্বীকার
করতে বাঁধে। হায়রে বিবেক! কি
মিথ্যে অহমিকা। অথচ সত্যের
কাছে নতজানু হওয়াইযে
বিজ্ঞানের প্রথম শপথ!
সূধী পাঠক, একবিংশ সতাব্দীর
প্রারম্ভে অহমিকায় অন্ধ তরুণ
বিজ্ঞানের কাছে যে প্রশ্নের
জবাব নেই তার জবাব দিয়ে
গেছেন দেড়হাজার বছর পূর্বে এক
মরুচারী। আসুন,দেখি কি সেই
জবাব। এই আলেচনায় প্রবেশের
আগে আমি মহামান্য কাজী
জাহান মিয়াকে স্বকৃতজ্ঞ চিত্তে
অভিবাদন জানাই এজন্যে যে
তিনি তার ‘আলকোরআন দ্য
চ্যালেঞ্জ গ্রন্থে অত্যান্ত সুচারু
রূপে এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।
আমরা দেখেছি বিগ ব্যাঙ বা
মহাবিস্ফোরণ থেকে জন্ম নিয়ে
বিবর্তনের ধারায় বহুকালের পথ
পরিক্রমায় আমাদের আজকের
অতিপরিচিত মহাবিশ্বের সৃষ্টি
হয়েছে। বিজ্ঞান তার উন্নত
মনষ্কতা দিয়ে নানাপরীক্ষা
নীরিক্ষার মধ্যদিয়ে মহাসত্যের
কষ্ঠিপাথরে যাচাই করে পরম
নিষ্ঠার সাথে সৃষ্টির সকল
ধাপগুলি দিনে দিনে ব্যাখ্যা
করেছে। তাদের এই ব্যাখ্যার
স্বার্থে স্বার্থপরের মত একটি
মিথ্যাকে সত্য ধরে সকল সত্যের
রূপায়ণ করেছে। তারা ধরেছে
বিগব্যাঙের সময় এই মহাবিশ্বের
তাবত পদার্থ ও শক্তি ছিল ঘণিভূত
আকারে অতি ক্ষুদ্র আকৃতিতে,যা
মহাবিস্ফোরণের মাধ্যামে ভ্রুণ
ভ্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টি করে। তার পরের
ইতিহাস অনেকটাই নানা প্রবন্ধের
মাধ্যামে জানা। কিন্তু একটা
বিষয় কোন প্রকারেই প্রণিধান
যোগ্য হচ্ছেনা যে,বিগব্যাঙ
থেকেই যদি মহাবিশ্বের
গোড়াপত্তন হয় তবে সেই ঘণিভূত
বস্তুটি এল কোত্থেকে? যদি ধরেও
নেই সে আপনা থেকেই উড়ে
এসেছে,তবে একথা অবশ্যই মানতে
হয় যে, সেটি কোন পদার্থ ছিলনা
ছিল পদার্থ তৈরীর মেশিন যা
কালে কালে মহাবিশ্বের সমগ্র
জাগতিক বস্তুগুলিকে সেই সোনার
ডিম পারা হাসের মত উপহার
দিয়েছে। তা নাহলে এ হিসেব
কি করে মিলবে যে অতিঘণ একটা
বিন্দুবত পদার্থ থেকে এতগুলি
সোনার ডিম বেরিয়ে এল।
তবে,যে কথা আমার মত মূর্খেরা
অনেক সময় পরে বুঝি সে কথাটি
বিজ্ঞান মণিষা যে অনেক আগে
বুঝে। এ ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
সবই বুঝা যাচ্ছে শুধু স্বীকার করা
যাচ্ছেনা,প্রাণপণে ঠেলে
দিচ্ছে বিপরীত দিকে। শুধু
বলছে,সেই ছোট্ট যন্ত্রটি
আপনাতেই সৃষ্ট হয়েছিল যা
পরবর্তী ডিমগুলো দিয়েছিল।
কারণ এখানে সত্যি স্বীকার
করতে গেলেই যে বাঁধে
বিপত্তি। এক পিতামাতাহীন
অপরিচিত স্রষ্টাকে মেনে নিতে
হয়। একেতো মানা যায়না-তবে
যে এতদিনকার অহমিকা ভেঙে
যায়। সত্যের কাছে পরাভব মানতে
হয়। বিজ্ঞান সে কথা মানুক আর
নাই মানুক আসুন দেখি আমরা
উপরের প্রশ্নের সমাধান পাই
কিনা।
ﻋَﻠِﻤْﺘُﻢُ ﺍﻟﻨَّﺸْﺄَﺓَ ﺍﻟْﺄُﻭﻟَﻰ ﻓَﻠَﻮْﻟَﺎ ﺗَﺬﻛَّﺮُﻭﻥَ ﻭَﻟَﻘَﺪْ
৫৬:৬২ ‘ওহে মানুষ! তোমরাতো ইতি
মধ্যেই অবগত রহিয়াছ প্রথম সৃষ্টি
সম্পর্কে-তবু কি তোমরা অনুধাবন
করিবেনা?’
এ কোন তথ্যের সন্ধান দিয়েছে
আল কোরআন?
সূধী পাঠক চলুন আমরা একটু
বিজ্ঞানের প্রাথমিক ইতিহাস
অনুসন্ধান করে দেখি কি অভিধা
ছিল জ্যোতির্বিজ্ঞানের উপর,
জ্ঞানের কতটুকু গভীরতা নিয়ে
বলেছিল যে মহাবিশ্বের তাবত
পদার্থ সম্ভার আপনাতেই সঞ্চিত
হয়েছিল এক বিন্দুতে।
আমার আলকোরআন দ্যা চ্যালেঞ্জ
গ্রন্থের আলোকে
জ্যোতিবিজ্ঞানের বাল্য পরিচয়
জেনে নেই। বিজ্ঞান তার
ঊষালগ্নেই ভাবনার জাল ছড়িয়ে
দিয়েছিল আমাদের এই মহাবিশ্ব
নিয়ে। আকাশের দিকে তাকিয়ে
সেই আদিম মানুষের মনেও
জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়েছিল-
কোথা থেকে এল এই তারার দল?
যুগে যুগে ধর্মীয় অনুসাসনের
আওতায় সেই অনুসন্ধিৎসার জবাব
এসেছিল- তারারা সব স্বর্গীয়
প্রদীপ,নিশি জাগা আলোক
বর্তিকা। নানা উপাখ্যানে
কল্পনার রঙ তুলি দিয়ে
সাজিয়েছে আকাশকে,কেউ
ভাবতো মহাজাগতিক ডিম, কেউ
ভাবতো স্বর্গের উদ্যান। প্রাচীন
মিশরীয়রা ভাবত আকাশ দেবী
সূর্যকে গিলে খেয়ে নিশাকালে
নিজেকে এলিয়ে দিত আকাশের
বক্র কোলে,আর উষাকালে প্রসব
করত এক নতুন সূর্য। ব্যাবিলনীয়রা
ভাবত সূর্যদেব নৌকায় করে সমুদ্র
পাড়ি দিয়ে উষাকালে উদিত হত
পূর্ব দিগন্তে। হিব্রুরা ভাবত ঈশ্বর
বড় বড় খুটি দিয়ে সামিয়ানার মত
করে আকাশকে ঝুলিয়ে রেখেছেন
ঊর্ধ জলের নিম্নতলে। আর পৃথিবী
ভেসে আছে দ্বীপের মত
নিম্নজলের উপরিভাগে। আকাশের
বক্রতলে ঠেসে আছে তরারা।
প্রাচীণ হিন্দুরা ভাবত চারটি
অতিকায় হাতি বয়ে নিয়ে
চলেছে পৃথিবীকে। নানা
জাতিতে নানা কিংবদন্তি ছিল
প্রচলিত। প্রাচীন মানুষ পৃথিবীকে
বিশ্বভ্রহ্মণ্ডের কেন্দ্রীয় বস্তু বলে
ধরে নিয়েছিল।
সেই প্রাচীনকালে অঙ্কুরিত
বিজ্ঞান হাঁটি হাঁটি পাঁ পাঁ
করে এগুতে এগুতে যীশুর জন্মের
পূর্বে ৬০০ বছরের সীমানায় এসে
দাঁড়াল, সর্বপ্রথম গ্রীক বিজ্ঞানী
একজিমাণ্ডার বুঝতে পারলেন
পৃথিবী কোন সমতল বস্তু নয়, এর পৃষ্ঠতল
বক্র। বিজ্ঞান ঊষা লগ্ন থেকে
বেড়িয়ে সবেমাত্র কিরণছটায়
উদ্দীপ্ত হতে লাগল,আর সেই
আলোকে উজ্জ্বল করে তুলতে
এগিয়ে এলেন পিথাগোরাস;
তিনি অঙ্ক কষে হিসাব মিলিয়ে
বললেন,পৃথিবী একটি গোলকার বস্তু
এবং এটি মহাবিশ্বের
কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। চন্দ্র সূর্য আর
পাঁচটি গ্রহ স্বর্গীয় বাজনা
বাজিয়ে মহাকাশে ভ্রমন করে।
পিথাগোরাসের মতবাদকে
(৩৮৪-৩২২ বিসি) এরিস্টোটল
স্বীকৃতি দিয়ে একেবারে
পাকাপোক্ত করে তোললেন।
ধর্মযাজকরা খুশী হয়ে মেনে
নিলেন দুই জ্ঞান সাধকের
মতবাদকে। নির্বিঘ্নে কেটে গেল
অনেক দিন। খৃষ্টপূর্ব ২৪০ অব্দে এসে
গ্রীসের বিজ্ঞানীগন
বিষ্ময়করভাবে প্রায় সঠিকভাবে
পৃথিবীর পরিধি মাপতে সক্ষম
হলেন,এ সময় এরিষ্টারকাস
চন্দ্রসূর্যের দুরত্ব নিয়ে হিসেব
করতে করতে চন্দ্রের সঠিক ব্যাস
নিরুপণ করলেন। তিনি প্রথম পৃথিবী
কেন্দ্রীক বিশ্বব্যবস্থার
বিরোধীতা করে সূর্য কেন্দ্রীক
মহাবিশ্বের প্রস্তাব করলেন।
জ্যোতির্বিদ্যায় গ্রহণ লাগতে শুরু
করল। তার পর নতুন ইতিহাস।যীশুর জন্ম
হল,তার প্রায় একশত বছর পরে
জন্মালেন জ্যেতিবিদ্যার
অগ্রপথিক টলেমী। প্রচুর জ্ঞানগর্ভ
কথার মাঝে;পুনরায় পৃথিবী
কেন্দ্রিক বিশ্বব্যবস্থাকেই অনুমোদ
করলেন। আরও বললেন,বিশ্বের
কেন্দ্রস্থলে স্থির হয়ে বসে আছে
আমাদের পৃথিবী। আর আকাশ তার
সমগ্র স্থির সদস্যদের নিয়ে
পৃথিবীকে দিনে একবার করে
প্রদক্ষিন করে। তার পর টলেমী
থেকে ষোল শতাব্দীর
মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রায়
দেড়হাজার বছর ধরে বিজ্ঞান ও
পৃথিবীর মানুষ একই ধারনা নিয়ে
প্রতিরাতে আকাশের দিকে
তাকিয়ে স্বর্গী আলোর পরিস্ফূটণ
দেখেছে।
এই গ্রহন কালের প্রায় মাঝামাঝি
এসে ৫৭০ খৃষ্টাব্দে জন্মালেন
ইসলাম ধর্মের অগ্রদূত মহা নবী হযরত
মোহাম্মদ (সা:)। চল্লিশ বছর
বয়স্কালে নবুয়ত প্রাপ্তির পর তিনি
দিলেন জ্যোতিবিদ্যার সবচেয়ে
বড় মতবাদ। কেউ শুনলনা তার
কথা,বুঝলনা প্রকৃত হিসাব। একজন
নিরক্ষর মরুচারীর কথাকে সবাই
ভাবল পাগলের প্রলাপ।
জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিষ্ময়কর
তথ্যগুলো বাণীবদ্ধ হয়ে পড়ে রইল
বছরের পর বছর। ১৫৪৩ সালে
কোপার্নিকাস পৃথিবীকে
সরিয়ে দিয়ে বিশ্বব্যবস্থার
কেন্দ্রে রাজকীয় সিংহাসনে
বসালেন সূর্য দেবতাকে। এমনি
করে সময় যেতে যেতে ইসলাম
ধর্মের বয়সও প্রায় হাজার বছর হয়ে
এল,এমনি সময় একদিন টাইকোব্রাহে
তার পর্যবেক্ষলবদ্ধ জ্ঞানের
দ্ধারা সর্বপ্রথম কোপার্নিকাসের
স্তির সূর্যকে আর স্থির থাকতে
দিলেননা। তিনি
বললেন,মহাবিশ্বের সকল বস্তুই ঘুরছে
কেহই স্থির নয় তবে পরস্পরের
চারিদিকে পরস্পরে (সম্ভবত পবিত্র
কোরআনের পাতায় তার নজর
পড়েছিল,বোধহয় পুরোপুরি হৃদয়ঙ্গম
করতে পারেননি)। ১৬৩৩ সালে
গ্যালেলিও যখন তার মানযন্ত্রটি
আবিস্কার করে বসলেন তখন সমগ্র
চিত্রপট গেল ঘুরে। তিনি
আকাশের দিকে তার যন্ত্রটি তাক
করে অবাক বিষ্ময়ে নিজের
অজান্তেই বলে বসলেন পবিত্র
কোরআণের মর্মকথা। তিনি বললেন
এই মহাবিশ্বে কোন কিছুই স্থির
নেই,মহাবিশ্বে আমাদের পৃথিবী
এক অতি নগন্য বস্তু।
জোতির্বিজ্ঞানের গ্রহনকাল
কেটে গেল বটে,কিন্তু তার
জীবনে নেমে এল অমানিশার
অন্ধকার। খ্রীষ্টান ধর্মযাজকরা
তার এই মন্তব্যের জন্য তাকে
মৃত্যুদণ্ড উপহার দিলেন। অবশেষে
তার এই মতবাদকে মিথ্যে স্বীকার
করে সকলের কাছে ক্ষমা চেয়ে
প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন এই
জ্ঞানবৃদ্ধ। ১৬৮৭ সনে বিজ্ঞানের
পিতা নামে খ্যাত বৈজ্ঞানিক
নিউটন সূর্যকেন্দ্রীক বিশ্ব
ব্যাবস্থাকে অনুমোদন দিয়ে
মাথায় আপেল পড়ার কারণ
ব্যাখ্যা করলেন। পৃথিবীর মানুষকে
প্রথম আধুনিক বিজ্ঞানের স্বপ্ন
দেখালেন। আবারো বিশুদ্ধ
হিসাবের মধ্য দিয়ে কোরআনের
বাণীর প্রতিধ্বণি চারিদিকে
ভেসে গেল,সবাই জানল এ
নিউটনেরই প্রতিভার পরিস্ফূটন। সময়
বয়ে চলল,বিশ্বকে অবাক করে
দিয়ে আইষ্টাইন এলেন এক
যুগান্তকারী ফর্মূলা নিয়ে। তিনি
বললেন e=mc2 ,যেখানে m বস্তুর ভর
আর c আলোর গতি। অর্থাৎ বস্তু যখন
আলোর গতি প্রাপ্ত হয় তখন সে আর
বস্তু থাকেনা শক্তিতে রূপান্তরিত
হয়ে যায়। সাড়া পৃথিবীতে
আলোড়ন সৃষ্টি হয়ে গেল,অনেক
পরীক্ষায় নীরিক্ষায় তা প্রমাণও
হয়ে গেল,দেখা গেল ১ কেজি
পরিমান ভরকে শক্তিতে রূপান্তর
করলে ১০১৭ জুল শক্তি উৎপন্ন হয়।
বিপরীত কথাটাও তাত্বিক ভাবে
সত্য হয়ে দাঁড়াল। পৃথিবীর মানুষ
সেই ছোট্ট প্রশ্নটির জবাব পেয়ে
গেল; কিন্তু মন ভরলনা বিজ্ঞানের।
কারণ তখন শক্তিকে সে রূপান্তর
করে বস্তুভর তৈরী করতে পারলনা।
বিফলে গেল সেই মহাসত্য।
আবারো প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিরে
এল সেই মহাবাণী।
৫১৪৭ মহা বিশ্বকে সৃষ্টি করিয়াছি
অসীম শক্তির দ্বারা ইহাকে
আমরা সমপ্রসারন করিতেছি।’
সূধী পাঠক,আসুন একবার ভেবে
দেখি মহান প্রভুর এই সহাবাণী
আজকের বিজ্ঞানের কতটা
পরিপূরক।
একবার ভেবে দেখুন,সেই অন্ধ যুগে
যখন মানুষ আকাশের দিকে ফ্যাল
ফ্যাল করে শুধূ তাকিয়ে থাকতো
আর উল্কাপতনের খেলা
দেখতো,ঠিক তখন এক নিরক্ষর
মরুচারীর কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হল-
ﻭَﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ ﺑَﻨَﻴْﻨَﺎﻫَﺎ ﺑِﺄَﻳْﺪٍ ﻭَﺇِﻧَّﺎ ﻟَﻤُﻮﺳِﻌُﻮﻥَ 51:47
কি কথা! বিজ্ঞানের কতবড় জটীঁল
সমস্যার সমাধান। একটা ছোট্ট
বাক্যের মধ্যে নিহিত হয়ে রইল
মহা বিশ্বের সৃষ্টি তথ্য। কিন্তু কেন
এই অকৃতজ্ঞতা। একটিবার কেউ
ফিরেও তাকালনা। একবারও
ভেবে দেখলনা যে,নভেলের
ভাণ্ডারে যতপুরস্কার জমে আছে
তার সবগুলো একত্র করে দিলেও এ
সৃষ্টির উপযুক্ত পুরস্কার হয়ে
উঠবেনা।এখানে কৌতুহলের
কারণে একটা ছোট্ট প্রশ্ন বার বার
মনকে নাড়া দিয়ে যাচ্ছে; তা
হল, এই মহাবাণীর প্রবক্তা নিজেও
কি জানতেন মধুর সুরে
বিশ্ববাসীকে তিনি কি
শুনিয়েছেন? সূধী পাঠক এ প্রসঙ্গে
একটা কথা আলোচনায় না এলে
যে বড় শূণ্যতার সৃষ্টি হয়; বিষয়টি হল
এই যে, আমাদের দেশের মহান
জ্ঞান সাধকগণ তাদের বক্তৃতা-
আলোচনায় আমাদের প্রিয়
মহানবী (সাঃ) প্রসঙ্গে কিছু
বিশেষণের প্রয়োগ করে
থাকেন,বলে থাকেন আমাদের
মহানবী ছিলেন বিশ্বের শ্রেষ্ট
জ্ঞানী,দার্শনিকদের দার্শনিক।
সকল শিক্ষকের গুরু।ষূধী পাঠক
আপনাদের কি মনে হয়? আসলে কি
তাই! যাই হোক প্রশ্নটা প্রশ্নই
থেকে যাক,মহান আল্লাহ যদি
সুযোগ করে দেন তবে অন্যত্র অন্য
কোন আলোচনায় আমরা এর জবাব
দেব।আমরা এখন পূর্ব আলোচনায়
ফিরে যাই।
একবার ভেবে দেখুন দয়াময়ের কত
সময়োচিত পরিবেশনা। তিনি
এমনি এক সময়ে এই মহাসত্যকে
বাণীবদ্ধ করলেন যখনকার সাধারন
মানুষ কেন, চুড়ান্ত বিজ্ঞান
মণিষাও আকাশ জ্ঞানে এই
ধারনার ত্রিসীমানায় ঢোকেনি!
আসুন,দেখি কি ঘটেছিল সেই
উষালগ্নে- আমরা জেনেছি একটা
শূণ্য পরিবেশে যখন বস্তুভর ছিল শূণ্য
সেই অবস্থায় ঘটে বিগ ব্যাঙ;
অর্থাৎ একটা অকল্পণীয় শূণ্যতা
থেকে সময়ের প্রসারণ ঘটতে
থাকে,সেই সাথে বস্তুভর সৃষ্টির
প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিজ্ঞান বলছে
সময় শুরু হয়েছিল একটা অতি সূক্ষ
পরিমাপ থেকে আর তা ছিল ১০-৪৩
সেকেন্ড। সময় শুরুর সঙ্গে সঙ্গে
যুগপথভাবে ঘটেছিল বিগ ব্যাঙ। এই
সময়কে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা
হয় প্লাঙ্ক টাইম। নাজানা যে
সম্ভার নিয়ে বিগ ব্যাঙ ঘটে
একটা স্বল্প সময়ের ব্যাবধানে
পদার্থ গঠনকারী আদি কণা বা
কোয়ার্ক তৈরীর প্রক্রিয়া শুরু হয়।
সেই সময়ের ব্যবধান হল ১০-৩৫
থেকে ১০-৩২ অর্থাৎ ৯.৯৯-৩৩
সেকেন্ড। অন্য ভাবে বলা যায়
বিগ ব্যাঙের ৯.৯৯-৩৩ সেকেন্ড পর
কোয়ার্ক কণার আবির্ভব ঘটে। তার
পর বিগব্যাঙ থেকে ১০-৬ সময়ে
০.০০০০০১ সেকেন্ড সময়ের
ব্যাবধানে মূল বস্তু কনার আবির্ভাব
ঘটতে শুরু করে। এই সময়কার মহাবিশ্ব
ছিল অত্যান্ত উত্তপ্ত,তাপমাত্রা
ছিল ১০৩২ কেলভিন। বলা চলে সেই
সময়কার মহাবিশ্ব ছিল এক প্রচণ্ড
উত্তপ্ত অগ্নিগোলক। শুরু থেকে ঐ
পর্যন্ত যে সময়কাল ব্যায়িত
হয়েছিল বিজ্ঞানীরা তার নাম
দিয়েছেন হেডরনিক ইরা (Hadronic
era)সময়কাল ১০-৪৩ থেকে ১০-৪
সেকেন্ড পর্যন্ত। এই সময়কালের
মধ্যেই তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায়
১০১২ কেলভিনে। বিগব্যাঙের সময়
সুপ্ত মহাবিশের ঘণত্ব ছিল ৩x১০৯২
গ্রাম/সি সি। এই ঘণত্ব ঐধফৎড়হরপ বৎধ
এর শেষ প্রান্তে এসে দাঁড়ায়
১০১৪ গ্রাম/সি সি তে। এই সময়
মহাবিশ্বে ব্যাস হয় মাত্র ১০-৩৩
সে মি অর্থাৎ সুক্ষ এক ভ্রুণ কনা।
Hadronic era এর পর শুরু হয় লেপটনিক ইরা
যার স্থায়িত্ব কাল হল জন্ম থেকে
১০ম সেকেন্ড পর্যন্ত অর্থাৎ
হেডরনিক ইরার সময়কাল বাদ
দিলে যে টুকু থাকে। এই সময়
তাপমাত্রা কমে দাঁড়ায় ১০১০
কেলভিনে। ঘণত্ব কমে হয় ১০৪
গ্রাম/সি সি। রেডিএকটিভ ইরার
সময়কাল হয় অনেক বড়- ১০ম
সেকেন্ডের পর থেকে ১০৬ বছর
পর্যন্ত। এই সময়ে তাপমাত্রা কমে
১০৪ কেলভিন পর্যন্ত। ঘণত্ব কমে
গিয়ে হয় ১০-২১ গ্রাম/সি সি।
তারপর ষ্টেলার ইরা। রেডিএকটিভ
ইরার পর থেকে অদ্যাবদি প্রায়
১৫বিলিয়ন বছর ধরে চলছে এর
সময়কাল। বর্তমান গড় তাপমাত্রা ২.৭
কেলভিন। ঘণত্ব ১০-২৮ গ্রাম/সি সি।
বর্তমান ব্যাস ২০ বিলিয়ন আলোক
বর্ষ। এই যে জন্ম থেকে এ পর্যন্ত
মহাবিশ্বের সার্বিক হিসেব
দেওয়া হল তাতে একটা বিষয়
নির্বিকার ভাবে অনুপুস্থিত। তা
হল মহাবিশ্বের বস্তুভরের পরিমান।
এখানে কিছু প্রচ্ছন্ন প্রশ্ন থেকে
যায়,তা হল,এই যে মহাবিশ্ব
সৃষ্টিলগ্নের সেই ভ্রূণাবস্থা
থেকে দেহকলেবরে বৃদ্ধি পেয়ে
বর্তমান আকৃতিতে এসে যে
বিশাল পরিমানে বস্তুভরের
অধিকারী হয়েছে তাকি
সেদিনের সেই ভ্রুণ বিশ্বের মধ্যে
ঘনিভূত ছিল? আমরা উপরের
হিসেবে দেখেছি হেডরনিক
ইরাতে ভ্রূণ ভ্রহ্মাণ্ডের ঘনত্ব
অকল্পণীয়, যার পরিমান ১০১৪ গ্রাম/
সি সি আর ব্যস ছিল ১০-৩৩ সে মি।
তাহলে বিজ্ঞানেরই হিসেব
মতে ভ্রূণ বিশ্বের তখনকার আয়তন
দাঁড়ায় 4/3 πr3 =4/3 3.14(0.5 x
10-33)3=5.236×10-100 সিসি আর বস্তুভর
দাঁড়ায়(আয়তন গুণন ঘণত্ব) অর্থাত
5.236×10-100 সিসি x 1014 গ্রাম/সি সি
=5.236×10-86 গ্রাম। এই পরিমান
কল্পনায়ও ভাবা যায়না। এই প্রাপ্ত
ফলাফল যদি হয় ভ্রূণ বিশ্বের পদার্থ
ভর তা হলে ১৫ বিলিয়ন বছর পরে
আজকের মহাবিশ্ব দেহ কলেবরে
এত বড় হল কি করে? কোথা থেকে
এল এই পদার্থ ভর। যদি সেই ক্ষুদ্র ভরই
ফুলে ফেপে এতবড় হয়ে থাকে
তবে কোথায় গেল নিউটনের
শক্তির নিত্যতা, কোথায় গেল
আইন্ষ্টাইনের e=mc2, আজ
বিজ্ঞানকে বলতে হবে এ প্রশ্নের
কি জবাব? সত্যের কাছে যদি
বিজ্ঞানকে নতজাণু হতেই হয় তবে
বলব জবাব আছে পবিত্র কোরআনের
৫১:৪৭ আয়াতে, পবিত্র সত্যের ধারক
ও বাহক বিজ্ঞানকে আহবান করব
কোরআনের সেই আয়াতটির
মর্মবাণী উপলব্দি করতে। এই
প্রশ্নের জবাবে বিজ্ঞান আজ
নিজেই তার মহাসূত্রগুলি নিয়ে
বিভ্রান্তিতে পড়েছে। যদি তার
নিত্যতার সূত্রকে ঠিক রাখতে হয়
তবে অবশ্যই ভর-বলের একজন জোগান
দাতার প্রয়োজন। কোথায় কোন
পক্ষে গিয়ে দাঁড়াবে আজকের
বিজ্ঞান। যদি বলে হাঁ! ছিল; ঐ শূণ্য
বিন্ধুতেই অপরিমিত শক্তি ঘণিভূত
হয়েছিল। তবে ফমূলা e=mc2 দিয়ে
তা প্রমাণ করতে হবে। আর যদি
বলে ছিলনা তবে এর যোগান
দাতাকে এনে দাঁড় করাতে হবে।
নইলে সবই শুভঙ্করের ফাঁকি হয়ে
যাবে। নিজের বিবেকের
বিরুদ্ধে দাড়িয়ে মিথ্যে
অহমিকায় একটা ছোট্ট হাঁ বলে
অন্তত অবচেতন মন থেকে একজন
যোগানদাতাকে স্থির করে
নিলেইতো সমগ্র ল্যটা চুকে যায়।
আসুন দেখি কিভাবে সেই সমস্যার
সমাধান হয়। আমরা যদি কোন একটা
শক্তির যোগানদাতাকে ধরে
ছকে ফেলি তবে এমনিতর একটা
চিত্র পেতে পারি-
শক্তি বা Energy – প্রয়োজনী
পরিমানে ঘণায়ন – মহাবিশ্বের
জন্ম
বিভিন্ন পর্যায়কালে বিবর্তন ও
সম্প্রসারন ও সেই সাথে
সর্বকালীন শক্তির জোগান।
জোর করে চাপিয়ে দিয়েতো
আর কাউকে কিছু বিশ্বাস করানো
যায়না,যতক্ষণ না দায়ে পড়ে;
নয়তবা অনুভূতিতে নাড়া দিলে
আপনাতেই ধারনার উদ্রেক হয় এবং
তা নানা যুক্তি প্রমাণের দ্বারা
বিশ্বাসে রূপ নেয়। সম্ভবত
এমনিধারা হয়েছিল আমাদের
বিজ্ঞান মনিষায়। আসুন, দেখি
কিভাবে শক্তির এই যোগানদাতা
এসে শেষ রক্ষা করলেন!
ধরে নিলাম সেই শূণ্য সময়ে কোন
উপায়ে এক মহাশক্তির ঘনায়ন
হয়েছিল এবং তা স্ফিতির
মাধ্যামে হঠাৎ বিস্ফোরিতত
হয়ে ভ্রুণ মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয় এবং
সম্প্রসারন শুরু করে। যদি তাই হয়
তবে আজকের মহাবিশ্বর তাবৎ
বস্তুভরের সমপরিমান শক্তির ঘণায়ন
হয়েছিল সেই ছোট্ট বিন্দুটিতে।
যুক্তির খাতিরে আমরা যদি তাই
ধরে নেই তবে ভ্রূণ মহাবিশ্বের
আয়তন এত ক্ষুদ্র হয়েছিল কেন?
বিজ্ঞানের যুক্তি মতে তার
একটা সমাধানও আমরা কল্পনা
করতে পারি যে,ভ্রূণ মহাবিশ্ব
সৃষ্টির পাশাপাশি প্রচুর শক্তি
উত্তাপরূপে ব্যয়িত হয়েছিল এবং
সেই উত্তাপ অতিদ্রুত বিকিরীত
হয়ে হ্যাডরনিক ইরার শেষে
অর্থাৎ অতি অল্প সময়ের ব্যবধানে
তাপমাত্রা কমে ১০১০ কেলভিনে
নেমে আসে। যা অকল্পনীয় ব্যপার।
আর বিকিরীত হয়ে যাবেইবা
কোথায় মহাবিশ্বের আয়তনতো
তখন অকল্পনীয় ভাবে নগন্য।এখানে
প্রকৃতির নিয়ম কানুন যে হার
মানে।জাগতিক নিয়ম হল প্রচুর
পরিমানে তাপ সঞ্চার না হলে
কোন বস্তুতে তাপমাত্রা
উচ্চকোঠায় পৌঁছুবেনা;আর এই প্রচুর
পরিমাণ তাপ ধারনক্ষম বস্তুভর
চাই;যা হেড্রণিক ইরাতে
অনুপুস্থিত।তাহলে এটাই ধরে
নিতে হয় যে সেই ক্ষুদ্র আয়তনের
মহাবিশ্বে ক্ষুদ্র পরিমানের
শক্তিই বিষ্ফোরিত হয়ে সেই
অসীম তাপমাত্রার সৃষ্টি করেছিল
যা বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব।
তাহলে আমাদের ধরে নিতে হবে
বিজ্ঞানের এই প্রক্কলিত
হিসাবে রয়েছে কুয়াসার আস্তরণ।
অপরিচ্ছন্ন হিসাবের উপর বিজ্ঞান
নিজেইযে আস্তাহীন।তাহলে
সমাধান একটিই; এক অসীম
শক্তিশালী শক্তির যোগান দাতা
বিপুল পরিমান শক্তিকে একত্রিত
করে সেই মহাবিস্ফোরণ সৃষ্টি
করেছিলেন; অন্যথায় অতি সুঁক্ষ
কোন বিন্দু থেকে বিস্ফোরণ সৃষ্টি
করে যুগপৎভাবে শক্তির যোগান
দিয়ে এই মহাবিশ্বের বিবর্তনের
কাজটি অতি নীরবে করে
যাচ্ছেন। এ ছাড়াও আর একটি
জটীল প্রশ্ন এসে সামনে দাড়ায়;
তাহল- আমাদের মহাবিশ্ব
সম্প্রসারনের গতি পাচ্ছে
কোথায়? অতি সহজ
উত্তর,বিজ্ঞানী নিউটন
দিয়েছেন এই ভাবে যে,
বাহিরের কোন বল ক্রিয়া না
করলে কোন স্থিতিশীল বস্তু
চিরদিন স্থিতাবস্তায় থাকবে বা
গতিশীল বস্তু একই গতিতে গতিময়
থাকবে। নির্ভেজাল জবাব-নব্য
প্রসূত বিশ্ব শাবকের কোন দিকেই
কোন বাধা নেই। অবারিত সব দিক।
জন্ম থেকেই বিস্ফোরণের শক্তি
নিয়ে চলছে যাত্রা। চলছে
নিউটনের সেই সমগতিতে। কিন্তু
না! সমস্যায় পড়ে গেলেন এই
নীতির প্রবক্তা খোদ
নিজে,সমস্যায় পড়লেন
আইনষ্টাইনের মত মহবিজ্ঞানীরা।
বাঁধ সাধল বস্তুভরের অভ্যন্তরে সৃষ্ট
মহাকর্ষ শক্তি। বলতে পারেন
পদার্থের আত্মিক শক্তি। এও
বিজ্ঞান পিতা নিউটনের
আবিষ্কার। যুক্তির বলে আটকে
গেল মহাশূণ্যে ধাবমান
মহাজাগতিক বস্তুগুলি। হিসেব
মতে থিতিয়ে পড়তে লাগল গতি
জড়তা। এ ছাড়াও রয়েছে আরেক
সমস্যা,নিউটনের গতি জড়তাকে
সমসত্ব রাখতে হলে আগে থেকেই
কোন বাঁধাহীন মহাশূণ্য তৈরী
করে রাখতে হবে তবে বস্তু সেই
শূণ্য পথে সম দ্রুতিতে চলবে; কিন্তু
আমাদের সেই তরুণ মহাবিশ্বের
জন্যে এমন ব্যবস্থা ছিলনা। এই সকল
বাঁধা বিপত্তি কাটিয়ে উঠার
জন্য শুরু হল দূরবীণ গুরিয়ে
পর্যবেক্ষনের পালা। দিন
গেল,মাস গেল বছর ঘুরে ঘুরে বহু
কাল গেল কিন্তু কোথাও কোন
তারকাকে থেমে থাকতে দেখা
গেলনা। বিজ্ঞানের চোখ
ধাঁধিয়ে গেল,যুক্তি গেল
ভেঙ্গে। সকলের চোখে ধূলা
দিয়ে তারারা দৌড়াতে লাগল
মহাগতিতে। শুধু কি তাই! বিজ্ঞান
হিসেব কষে দেখল মহাকর্ষের মত
এতবড় বাধা সত্যেও এই গতি
কমছেতো নাই বরং প্রতি মুহুর্তে
বিষণ ভাবে ত্বরাণ্বিত হচ্ছে। জগৎ
বিজ্ঞানীগণ মহা ফাঁপরে পরে
গেলেন,শুরু হল পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ
মহাশূণ্যের কন্দরে কন্দরে।
হাজারো আলামত পেলেন এক
মহাশক্তির। চোখে দেখতে না
পেলেও স্বতঃসিদ্ধের ন্যায়
মেনে নিলেন সেই মহাশক্তির
উপস্থিতি। বললেন, মহাবিশ্বের
সমগ্র শূণ্যতা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে
এক বিষ্ময়কর শক্তি। নাম দিলেন কৃষ্ণ
শক্তি। সমস্যা অনেকটাই মিটে
গেল। ধরে নিলেন এই শক্তিই
মহাকর্ষ ডিঙ্গিয়ে মহাজাগতিক
বস্তুভরকে ত্বরান্বিত গতিতে
এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আরো ধরে
নিলেন এই কৃষ্ণশক্তিই কৃষ্ণ পদার্থ
তৈরীর কাঁচা মাল হিসাবে কাজ
করে, আর কৃষ্ণপদার্থ বিবর্তণের
ধারায় মহাজাগতিক বস্তু নিলয়ে
রূপান্তরিত হচ্ছে। ঝামেলা
অনেকটাই মিটেছে বটে! তবে
তাত্ত্বিক ভাবে মেনে নিয়ে
অনুভবের দ্ধারা বিশ্বাসে
নিলেও এখন পর্যন্ত চাক্ষুস
পরীক্ষার দ্বারা প্রমান করা সম্ভব
হয়নি। তবে তা এখন সময়ের
কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছে।
এই তাত্ত্বিক চিন্তাভাবনার
মধ্যেই থেমে থাকেনি বিজ্ঞান,
নানাপ্রকার পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ
দ্বারা জগৎ বিজ্ঞানীরা এই
সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেনে
যে, এই মহাবিশ্ব শুধুমাত্র দৃশ্য
বস্তুনিলয়ের এ জগৎ নয় এখানে
রয়েছে নানা অদৃশ্য বস্তু ও
শক্তি,আর এই দুইয়ে মিলে গড়ে
তুলছে আমাদের এই সুন্দর সাজানো
বিশ্ব সংসার। একসময় মানুষের
কাছে শক্তি ও পদার্থের উভমূখী
রূপান্তর ছিল অসম্ভব ব্যপার। কিন্তু
এখনকার যুগে শক্তি থেকে
পদার্থের রূপান্তর কঠিণ হলেও
অবিশ্বাস্য নয়। শক্তি ও ভরের
নিত্যতা নিয়েও প্রশ্ন জেগেছে
মানুষের মনে। আমাদের সূর্য প্রতি
মুহুর্তে ৬০০ মিলিয়ন টন
হাইড্রোজেনকে রূপান্তরিককরে
৪০০ মিলিয়ন টন হিলিয়াম উৎপাদন
করে বাকী পদার্থকে শক্তি রূপে
ছড়িয়ে দিচ্ছে মহাকাশের বুকে।
আর এই বিচ্ছুরিত শক্তির দয়ায়
বেঁচে আছে সৌর পরিবার। শক্তি
থেকে পদার্থের রূপান্তর আজকের
দুণিয়ায় অবিশ্বাস্য নয়। আজ এ
পরিবর্তন মানুষের পরীক্ষাঘারেই
সম্ভব হয়েছে-পদার্থের সাথে
গামা রশ্মির সংঘর্ষ বাঁধিয়ে
পাওয়া গেছে পজিট্রন-ইলেক্টন
জোর। যা পদার্থ ও এন্টিপদার্থ
নামে খ্যাত। এই উৎপাদন
প্রক্রিয়ায় হিসেব করে দেখা
গেছে যে এই উৎপাদনকারী
গামারশ্মি বা শক্তি প্রবাহের
ফোটন (শক্তি গুচ্ছ বা আলোর কণা)
কনায় উৎপাদিত পদার্থ জোরের
মোট ভরের সমপরিমান বা
তারচেয়ে বেশী শক্তি থাকে
তবেই ঐ পদার্থ জোড় সৃষ্টি সম্ভব।
যদি ফোটনে শক্তি বেশী থাকে
তবে তা উৎপাদিত পদার্থ
জোড়ের কোন একটিতে গতিশক্তি
রূপে প্রকাশ পায়। এই আলোচনা
থেকে একথা পরিস্কার ভাবে
প্রতিয়মান হয় যে শক্তি বা অলোক
রশ্মি বা কোন বিকিরণ শক্তি হতে
পদার্থ সৃষ্টি সত্য ও সম্ভব। তাহলে
নিঃসঙ্কোচে এ কথা বলা যায়
যে বিপুল শক্তির যোগান থেকে
বিপুল পদার্থ তৈরী কোন
অস্বাভাবিক বা অলৌকিক ঘটনা
নয়। এটি এখন শুধু তাত্ত্বিক ভাবে
নয়,পরীক্ষিত সত্য।
তাহলে যুক্তি গ্রাহ্যতার
পাশাপাশি বলা যায় যে,শূন্য
পদার্থ পরিস্থিতিতেও বিপুল
শক্তির প্রবাহ দিয়ে পদার্থ সৃষ্টি
ও তাকে গতিশক্তিতে আনয়ন সম্ভব।
এই সূত্রে নির্দ্বিধায় মেনে
নিতে হবে যে,শূণ্য অবস্থায় পদার্থ
সৃষ্টির জন্যে শক্তির প্রবাহ
অপরিহার্য।অর্থাৎ শূন্য সময়ে পদার্থ
ও শক্তি এই উভয়ের শূণ্যতাকে
মেনে নেওয়া যায়না। এখানেও
সেই নিত্যতার সূত্রই কাজ করে।
অর্থাৎ পদার্থ মানেই শক্তির
রূপান্তর। যদিও প্রাচীন বিজ্ঞান
‘একদম শূণ্য’ হতে বস্তু সৃষ্টির
সম্ভাবনাকে সমর্থন দেয় তবে তা
শূণ্য বস্তুর বেলায় সম্ভব,শক্তির
বেলায় নয়। কারণ এই সমীকরণের
পরিবেশ একমাত্র শক্তির জোগান
থেকেই সম্ভব হতে পারে। নতুন
সৃষ্টি শুধুমাত্র পুরাতনকে দিয়েই
সম্ভব।
আমাদের উপরোক্ত বৈজ্ঞানিক
আলোচনা সমুহের পরিশিষ্টে এই
দাঁড়াল যে,সার্বিক শূণ্যতা থেকে
বস্তু সৃষ্টি হয়েছে এমন সর্ত মেনে
নিলে খোদ বিজ্ঞানই ব্যখ্যা
শূণ্যতায় পরে যায়, প্রাকৃতিক
আইনের সেই মহাশর্ত e=mc2 ব্যখ্যার
অযোগ্য হয়ে পড়ে। আর এই
ব্যাখ্যাহীনতা থেকে মুক্তির
একটাই শর্ত এক অসীম শক্তিধর
বহিঃশক্তির উপস্থিতি মেনে
নেওয়া। যার উপস্তিতির চাক্ষুস
প্রমান ছাড়া অনুভবের সর্বপ্রকার
আয়োজনই প্রকৃতির প্রতিটি কন্দরে
ছড়িয়ে আছে। শুধু মেনে নেওয়ার
মাঝেই তার প্রকাশ। অনুভবে এই
উপস্থিতি নিরিক্ষণ করার মত
ক্ষেত্র কি আপনি খুঁজে
পাচ্ছেননা? আসুন,দেখি কোথায়
খুঁজতে হবে!
ﺃَﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮَﻭْﺍ ﻛَﻴْﻒَ ﻳُﺒْﺪِﺉُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖَ ﺛُﻢَّ ﻳُﻌِﻴﺪُﻩُ ﺇِﻥَّ ﺫَﻟِﻚَ
ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻳَﺴِﻴﺮٌ
২৯:১৯‘তাহারা কি লক্ষ্য করেনা
কিভাবে আল্লাহ আদিতে
সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করেন।
অতঃপর তাকে পুনরায় সৃষ্টি
করবেন;এ কাজ আল্লাহ্র জন্যে সহজ।’
ﻗُﻞْ ﺳِﻴﺮُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻓَﺎﻧﻈُﺮُﻭﺍ ﻛَﻴْﻒَ ﺑَﺪَﺃَ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖَ ﺛُﻢَّ
ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻳُﻨﺸِﺊُ ﺍﻟﻨَّﺸْﺄَﺓَ ﺍﻟْﺂﺧِﺮَﺓَ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ
ﻗَﺪِﻳﺮٌ
২৯:২০‘বল,পৃথিবীতে সন্ধানী দৃষ্টি
নিক্ষেপ কর এবং অনুসন্ধান কর
আল্লাহ্ কেমন করিয়া প্রথম সৃষ্টি
আরম্ভ করিয়াছেন;অতঃপর তিনি
পুনরায় সৃষ্টি করিবেন। নিশ্চয়
আল্লাহ্ সবকিছু করিতে সক্ষম। ’
৫৬:৬২‘ওহে মানুষ!তোমরাতো
ইতিমধ্যেই অবগত রহিয়াছ প্রথম
সৃষ্টি সম্পর্কে-তবু কি তোমরা
অনুধাবন করিবেনা?
৫১:৪৭ মহা বিশ্বকে সৃষ্টি
করিয়াছি অসীম শক্তির দ্বারা
ইহাকে আমরা সমপ্রসারন
করিতেছি।’
৬:৭৩ সেই সত্ত্বাই আকাশ সমুহ ও
পৃথিবীকে সৃষ্টি করিয়াছেন সঠিক
সমতায়। তিনি যখন আদেশ করেন ‘হও’
অমনি তাহা হইয়া যায়।’
ﻭَﻣَﺎ ﺃَﻣْﺮُﻧَﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻭَﺍﺣِﺪَﺓٌ ﻛَﻠَﻤْﺢٍ ﺑِﺎﻟْﺒَﺼَﺮِ
৫৪:৫০‘আমার আদেশ চোখের দৃষ্টির
ঝলকের ন্যায়-‘একবার ব্যতিত নহে।’
ﺃَﻣَّﻦ ﻳَﺒْﺪَﺃُ ﺍﻟْﺨَﻠْﻖَ ﺛُﻢَّ ﻳُﻌِﻴﺪُﻩُ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﺮْﺯُﻗُﻜُﻢ ﻣِّﻦَ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﺀ
ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﺃَﺇِﻟَﻪٌ ﻣَّﻊَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻗُﻞْ ﻫَﺎﺗُﻮﺍ ﺑُﺮْﻫَﺎﻧَﻜُﻢْ ﺇِﻥ ﻛُﻨﺘُﻢْ
ﺻَﺎﺩِﻗِﻴﻦَ
২৭:৬৪ বলতো,কে প্রথমবার সৃষ্টি
করিয়াছেন,অতঃপর পুণরায়
তাহাকে সৃষ্টি করিবেন এবং কে
তোমাদেরকে আকাশ ও মর্ত হইতে
রিযিক দান করিবেন। সুতরাং
আল্লাহ্র সাথে অন্য কোন উপাস্য
আছে কি? তোমরা যদি সত্যবাদী
হও তবে তোমাদের প্রমান উপস্থিত
কর।
উপরের আলোচনা থেকে আমরা
একটা ব্যাপারে পরিস্কার ধারনা
পাই তা হল সৃষ্টির প্রারম্ভে বিপুল
শক্তি প্রবাহের দ্বারা এই
মহাবিশ্বের গোড়াপত্তন হয় এবং
সেই শক্তির প্রভাবেই তার
সম্প্রসারন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং সেই
সঙ্গে বিবর্তীত হয়ে দিনে দিনে
দেহকলেবরে বেড়েই চলছে।
বিজ্ঞান মনিষার কাছে সেই
শক্তির যোগানও যোগান দাতার
সম্পর্কে কোন গ্রহন যোগ্য তথ্য নেই
ফলে সেই ব্যাখ্যাশূণ্যতার হতাশা
নিয়ে সারা বিশ্বময় খুঁজে
বেরাচ্ছে কোন এক শক্তিধরকে।
প্রতিপলে প্রতি ক্ষেত্রে তার
অস্তিত্বের পরোক্ষ প্রমাণ পাচ্ছে
ঠিকই কিন্ত হাতেনাতে ধরতে
পারছেনা-শুধু পালিয়ে
বেড়াচ্ছে। সেই ব্যাখ্যাশূণ্যতার
প্রেক্ষাপটে আমরা পবিত্র
কোরআনের যে আলোচনাটুকু তুলে
ধরলাম, তাতে আপাত দৃষ্টিতে
একটা বড় সমস্যার সমাধান হয়ে যায়
এই দিক থেকে যে,শূণ্য সময়ে শূণ্য
পরিবেশে একমাত্র এই পদ্ধতিতেই
বস্তুসম্ভার সৃষ্টি হওয়া সম্ভব। তা
নাহলে আরেকটা ব্যাখ্যাশূণ্যতার
মুথোমুখি হতে হয়,যেমন-আমরা যদি
ধরে নেই যে,সৃষ্টির সেই ক্ষণটিতে
কোন প্রকার শক্তির প্রবাহ বা
যোগান ছিলনা তবে বাধ্য হয়েই
একথা মেনে নিতে হবে যে
বিস্ফোরণের জন্য বিপুল পরিমানে
বস্তুসম্ভার ঘণীভূত অবস্থায় অবস্থান
করছিল-তাহলে আবার সেই একই
প্রশ্ন; এল কোত্থেকে? বিকল্প
সমাধান হল অলৌকিকতাকে
মেনে নেওয়া বা সবলবলে মনের
সকল কৌতুহলকে চাপা দিয়ে
একটা কথাই স্বীকার করে নেওয়া
যে সকল রসদ আগে থেকেই প্রস্তুত
হয়ে ছিল। আর এ ক্ষেত্রেও বলব-এ
মহান কোরআনেরই বিজয়,-হয়ত
বিজ্ঞানের পরবর্তী ধারা সেই
আগে থেকে মজুত করা বস্ত
সম্ভারের সৃষ্টি তত্ত্ব সন্ধান করতে
গিয়ে খুঁজে পাবে প্রকৃত
স্রষ্টাকে।
আমরা উপরের আয়াতগুলির
ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানের সেই
ব্যাখ্যাশূণ্য পরিবেশটাকে খুঁজে
পেয়েছি,এবং এও বুঝতে পেরেছি
যে দয়াময় সম্পুর্ণ শূন্য পরিবেশেই এই
বিশ্বসংসারটি সৃষ্টি করেছিলেন।
এখানে কোরআন সেই অন্ধকার যুগে
অত্যান্ত বিজ্ঞতার সাথে
বলেছে- ’৫১:৪৭ মহা বিশ্বকে সৃষ্টি
করিয়াছি অসীম শক্তির দ্বারা
ইহাকে আমরা সম্প্রসারন
করিতেছি।’এই মহাবাণী
বিজ্ঞানের সকল ব্যাখ্যা
শূণ্যতাকে এক নিমিষে পরিপূর্ণ
করে দিলেও বিজ্ঞান তা মেনে
নিতে পারছেনা,বাধ্য হয়ে
শক্তির অবস্থানকে মেনে নিতে
পারলেও তার যোগানদারকে
মেনে নিতে পারছেনা ফলে
সবকিছুই কেমন যেন গুলিয়ে
যাচ্ছে।
আমরা যদি কোরআনের এই
মহাবাণী দিয়ে বিজ্ঞানের এই
ব্যাখ্যাশূণ্যতাকে পূরণ করি তবে
একটা বিষ্ময়কর প্রশ্ন এসে
দাড়ায়,তাহল দয়াময়কি প্রকৃতই
সবকিছু শক্তির রূপান্তর থেকে
সৃষ্টি করেছেন! তার কি কোন
ব্যাখ্যা পবিত্র কোরআনে রয়েছে!
আলোচনার এপর্যায়ে এসে আমরা
পবিত্র কোরআনের আলোকে দাবী
করতে পারি যে,এই বিশ্বসংসার
বিপুল শক্তিপ্রবাহের দ্বারাই
সৃষ্টি হয়েছিল। আর মহাবিশ্ব যে
এক মহাবিস্ফোরণ থেকেই জন্ম
নিয়েছিল তার বর্ণনা মিলে
নিম্নের আয়াতে-
সূধী পাঠক দেখি এ বিষয়ে আল
কোরআান কি বলছে-
ﺃَﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻛَﻔَﺮُﻭﺍ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﺴَّﻤَﻮَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽَ ﻛَﺎﻧَﺘَﺎ
ﺭَﺗْﻘًﺎ ﻓَﻔَﺘَﻘْﻨَﺎﻫُﻤَﺎ ﻭَﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺎﺀ ﻛُﻞَّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺣَﻲٍّ ﺃَﻓَﻠَﺎ
ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ
২১:৩০ সত্য প্রত্যাখ্যানকারীগণ কি
প্রত্যক্ষ করেনা যে পৃথিবীসমেত
মহাবিশ্ব ওতপ্রোতভাবে জড়িত
ছিল একটি অতিশক্ত ঘনিভূত ও
গলানো উপাদানে পরস্পর
পরস্পরের সহিত সন্নিবিষ্ট জমাটবদ্ধ
একটি পিণ্ডাকৃতিতে,অতঃপর
আমি উহাকে খণ্ডায়িত
করিয়াছি এক বিস্ফোরনের
দ্বারা এবং প্রতিটি জীবন্ত
জিনিসকে আমরা উঠাইয়াছি
পানি হইতে। উহার পরেও
তাহারা কি বিশ্বাস করিবেনা?’
প্রচলিত তরজমায় ﺭَﺗْﻘًﺎ শব্দটির অর্থ
করা হয়েছে ‘সংযুক্ত ছিল’ এবং
ﻓَﺘَﻘْﻨَﺎ শব্দের অর্থ করা হয়েছে ‘পৃথক
করিয়া দিয়াছি’। কিন’ এখানে
অবস’া বর্ণনা করা হয়নি। ﺭَﺗْﻘًﺎ শব্দটির
বিভিন্ন অর্থ রয়েছে,যেমন-
মোড়ানো,একত্রে
জোড়া,বিজড়িত থাকা এবং
শব্দটির অন্যান্য অর্থ হল-খণ্ডিত
হওয়া,বিদীর্ণ হওয়া,বিস্ফোরণ
ঘটানো ইত্যাদি। কাজী জাহান
মিয়া এই বিস্ফোরণ শব্দটি গ্রহন
করে উপরুক্ত তরজমাটি গ্রহন
করেছেন। এই আয়াত দৃষ্টে
বিজ্ঞান কর্তৃক প্রস্তাবিত
বিস্ফোরণ তত্ত্বের সাথে সামান্য
বিরোধ ঘটে যা নিম্নরূপ-
বিজ্ঞান বলছে বিগব্যাঙ বা
মহাবিস্ফোরন থেকে উৎপন্ন হয়ে
ভ্রূণ মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয় অতঃপর
সম্প্রসারণের মাধামে তার কলেবর
বৃদ্ধি শুরু হয়। বিজ্ঞান আরও বলছে
বিস্ফোরণের পর অতি অল্প সময়ের
ব্যবধানে শক্তিপুঞ্জ থেকে বস্তু
কনা তৈরীর আদি উপাধান
কোয়ার্ক গঠন পক্রিয়া শুরুর
মাধ্যামে বিবর্তণ এগিয়ে চলে।
কিন্তু কোরআন বলছে বিস্ফোরণ
সংঘটিত হওয়ার আগে মহাবিশ্ব
ছিল গলিত জমাটবদ্ধ পিণ্ড। অতঃপর
বিস্ফোরণের মাধ্যামে বিচ্ছিন্ন
হয়ে শুরু হয় মহাজাগতিক
বস্তুনিলয়ের সৃষ্টি প্রক্রিয়া। এই
সমন্বয়হীনতার কি সুরাহা থাকতে
পারে? হয়তো বিজ্ঞান বলবে,তার
প্রাক্কলিত হিসাবের মধ্যদিয়ে
স্থিরিকৃত মতামতই সঠিক, কোরআন
ভুল তথ্য দিচ্ছে। সুধী পাঠক কোরআন
কি এ ক্ষেত্রে সত্যি অসহায়?
না! বিশ্ব বিজ্ঞানীর বাণী ভুল
হতে পারেনা! আমরা ইতিপূর্বে
দেখেছি বিজ্ঞান মণিষা তার
সমগ্র চিন্তা চেতনা একত্রিত করে
সগর্বে বলছে আজকের এই
মহাবিশ্বকে সচল রাখতে হলে
শক্তির যোগান চাই,সেই শক্তিই
মহাবিশ্বের ভিত রচনা করেছে।
তার অস্তিত্বকেও বিজ্ঞান নানা
পরীক্ষা নীরিক্ষা দ্বারা
স্বতঃসিদ্ধের ন্যায় স্থির করেছে-
এর নাম কৃষ্ণ শক্তি। এবার বলতে আর
কোন দ্বিধা নেই যে সেই কৃষ্ণ
শক্তিই ঘনায়নের শাধ্যামে সেই
আদি পিণ্ডটির জন্ম দিয়েছিল
যাকে বলা যায় ভ্রূণ বিশ্ব। তহলে
যুক্তিতে,শূণ্য অবস্থা থেকে
মহাবিশ্বের ভ্রূণ সৃষ্টি হয়নি-
হয়েছিল কৃষ্ণ শক্তির ঘণায়ন থেকে।
তাহলে এ কথাটি পরিস্কার হয়ে
যায় যে,সেই কৃষ্ণ শক্তির যোগান
দাতাই প্রথমে আবির্ভূত
হয়েছিলেন এবং নিজ ইচ্ছায় সৃষ্টি
কর্মে মনযোগী হয়েছিলেন। হয়তো
এই উদ্যত কথাটি বিজ্ঞান কোন
প্রকারেই মেনে নেবেনা,কারণ
তাহলে সত্যের আড়ালে যে
মিথ্যের প্রতিমা ভেঙে চুরমার
হয়ে যাবে। সূধী পাঠক, হয়তো
আপনিই প্রশ্ন করে বসবেন- কি এর
প্রমাণ? প্রমাণতো বিজ্ঞান
মণিষা নিজেই। প্রথম যেদিন
বিজ্ঞান স্বপ্রনোদনায় বলে উঠল
যে, মহাকর্ষের এই বিশাল
রাজত্বে শক্তির যোগান ছাড়া
কোন ক্রমেই মহাজাগতিক
বস্তুনিলয়কে অগ্রসরমান রাখা সম্ভব
নয়। তখনিতো প্রমাণ হয়ে গেল,
কোন এক মহান শক্তি দাতা তার
আপন ভাণ্ডার থেকে বিপুল শক্তির
যোগান দিয়ে মহাবিশ্বকে সচল
রেখেছেন- আর কিছু লোককে
উজ্জিীবিত করে তুলেছেন শক্তির
যোগানদাতাকে খুঁজে বের
করতে। তা ছাড়াও আজকের
বিজ্ঞান যখন আকাশের পানে
ম্রিয়মান দৃষ্টি দিয়ে নিজেই
প্রশ্ন করে-কি হবে এই মহাবিশ্বের
ভবিষ্যত, যদি কখনো এই শক্তির
যোগান শেষ হয়ে যায়? নিজের
অবচেতনে নিজেই জবাব দেয়,তবে
মহাকর্ষের অসীম টানে আবার
ফিরে আসবে সেই আদি গোলকে।
২৭:৬৪ বলতো,কে প্রথমবার সৃষ্টি
করিয়াছেন,অতঃপর পুণরায়
তাহাকে সৃষ্টি করিবেন এবং কে
তোমাদেরকে আকাশ ও মর্ত হইতে
রিযিক দান করিবেন। সুতরাং
আল্লাহ্র সাথে অন্য কোন উপাস্য
আছে কি? তোমরা যদি সত্যবাদী
হও তবে তোমাদের প্রমান উপস্থিত
কর
বিজ্ঞান যে ব্যাখ্যাই দিকনা
কেন,এ কথাতো সত্যি
যে,বিজ্ঞানের খোঁজে এমন কোন
শক্তির ভাণ্ডার নেই যে মহাবিশ্ব
সৃষ্টির শুরু থেকে শক্তির যোগান
দিয়ে আসছে।
২১:৩০ অবিশ্ব্বাসীরা কি লক্ষ্য
করেনা যে,আকাশ মণ্ডল ও পৃথিবী
পরস্পর সংযুক্ত ছিল; পরে আমরা
উহাদের পৃথক করিয়া দিয়াছি
এবং প্রতিটি জীবন্ত জিনিসকে
আমরা উঠাইয়াছি পানি হইতে।
উহার পরেও তাহারা কি বিশ্বাস
করিবেনা?
পরিস্কার বর্ননা। দেড়হাজার বছর
আগেই কোরানের পাতায়
বিগব্যাঙের কি পরিস্কার চিত্র।
এবার প্রশ্ন হল এই বিগ ব্যাঙের সময়
কাল নিয়ে.পবিত্র কোরাআন কি
বলছে। অতি কঠিন প্রশ্ন! আমরা
বিজ্ঞানের আলোচনায় দেখেছি
এই সময় এক অতি সূক্ষ সময়-চোখের
পলককে ১ এর সামনে ৪৩ টি শূণ্য
দিয়ে ভাগ করলে যে সংখ্যামান
পাওয়া যায় সেই সময়ে
মহাবিস্ফোরণটি
ঘটেছিল,সেরকমেরই একটা ক্ষুদ্র
সময়কাল সেই বিস্ফোরণে ব্যয়িত
হয়েছিল আর তখনি ঘণীভূত শক্তিভর
থেকে আদি বস্তু তৈরীর প্রক্রিয়া
শুরু হয়েছিল। মহামান্য কাজী
জাহান মিয়া তার আলকোরআন দ্য
চ্যালেঞ্জ গ্রন্থ এ বিষয়টিকে
অত্যান্ত গুরুত্বের সাথে সুচারুরূপে
বৈজ্ঞানিক যুক্তি তর্কের
মাধ্যামে প্রমাণ করতে
চেয়েছেন যে এ বিষয়ে
কোরআনের বক্তব্যকে বিজ্ঞান
সমর্থন করে। তার জন্যে কোরআনের
প্রচলিত ব্যাখ্যা ও
প্রাসঙ্গিকতাকে প্রয়োজনে
যথেষ্ট পরিবর্ধন করার চেষ্টাও
করেছেন-যা অত্যান্ত জরুরী ও
প্রাসঙ্গিক। তাতে পরিমাপের
সুক্ষতা ও প্রচ্ছন্ন অনুভূতির
বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে,আমাদের
দৃষ্টির প্রসারতা এসেছে-সম্ভবতঃ
তাতে মহান দয়াময়ের বিষ্ময়কর
বাণী তত্ত্বের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ
হলেও আমাদের মানষপটে
রেখাপাত করার সুযোগ পেয়েছে।
এই সুচারু বিশ্লেষনের ক্ষেত্রে
তিনি এযাবৎকাল বিজ্ঞানের
প্রদানকৃত তত্ত্ব ও তথ্য গুলিকে
স্বতঃসিদ্বরূপে নির্ভেজাল সত্য
বলে ধরে নিয়েছেন। এবং তারই
আলোকে পবিত্র কোরআনের
ভাষ্যগুলিকে নানাভাবে
বিশ্লেষন করে তার সাথে
বিজ্ঞানের সমান্তরাল
অনুভূতিকে অনুভব করেছেন। এ
ক্ষেত্রে একটা বিষয় উত্থাপন না
করে পারছিনা তারজন্যে আমি
অধম আমার পথ নির্দেশক মহামান্য
কাজী জাহান মিয়ার কাছে
ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমরা
সর্বকালে নিঃসঙ্কোচে মেনে
নিয়েছি যে বিজ্ঞান সত্য
অনুসন্ধানী এক নিরপেক্ষ মণিষা।
সেই ধারনার উপর অচল বিশ্বাস
রেখে আমরা আমাদের আলোচনায়
প্রবেশ করছি-
বিগ ব্যাঙের তত্ত্ব ও তথ্যে আমরা
দেখেছি ঘটনাটি ঘটেছিল অতি
সুক্ষ এক সময়ে যার হিসেব মানুষের
বুদ্ধির অগম্য। এ তত্ত্বটি নিশ্চই
চাক্ষুষ কোন প্রমান সিদ্ধ নয়,অনুমান
নির্ভর একটা প্রকল্পিত ধারনা,
আনুষাঙ্গিক যুক্তি ও প্রমানাদি
যার স্বপক্ষে অকাট্য।
আমরা দেখেছি তেমনি এক
সুক্ষ্যাতিসুক্ষ সময়ে বিপুল শক্তিভর
আদি বস্তুর অস্তিত্বের উন্মেষ
ঘটায়। এই প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার জন্যে
যে সময়কাল ব্যায়িত হয় তা হল
১০-৪৩ থেকে ১০-৪ সেকেন্ড।
বিজ্ঞানের এই প্রাক্কলিত সময়
কোন্ তথ্যের ভিত্তিতে তা
আমাদের কাছে পরিস্কার নয় বলে
আমরা ধরে নিতে পারি যে তা
হয়তো আমাদের জানা
বিস্ফোরণজনিত সময়কালের
পরিসখ্যান থেকে অনুমিত। আমরা
আগেই জেনেছি ব্যয়িত এই স্বল্প
সময়ে সমগ্র শক্তি-ভর বস্তুর আদি কণা
কোয়ার্ক গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে।
আর তার জন্যে বিপুল শক্তিভরকে
ঘণায়নের মাধ্যামে শূণ্য আয়তনে
আনতে হয়েছিল- যা সম্পূর্ণই
কাল্পণিক,যুক্তিগ্রাহ্য নয়। যদিও
বিজ্ঞান সেই শক্তিভরের
যোগানকে স্বীকার করেনা ফলে
বিগ ব্যাঙের সমগ্র ঘটনাটাই
ব্যাখ্যাশূণ্যতায় পড়ে যায়। তথাপি
আমরা ধরে নিচ্ছি বিজ্ঞানের এই
অনুমিত প্রকল্প ঠিক; শুধূ কৌতুহল
জাগছে,ব্যয়িত সময়কাল ও বস্তুভর এর
পরিমাপে। আমরা যদি বিগ
ব্যাঙের জন্য একটা সঞ্চিত
শক্তিকে মেনে নেই তবে
সেখানে শূণ্য আয়তনের
বাধ্যবাদকতা কেন। কেন বিপুল
শক্তিভরকে ঘণীভূত করে শূণ্য
আয়তনে আনতে হবে?-যা খোদ
বিজ্ঞানই ব্যাখ্যা করতে
পারেনি, বিদ্ধ হয়ে আছে
প্রশ্নবোদক চিহ্নে (?)। হেড্রনিক
ইরার, বিজ্ঞান যে ব্যাখ্যা
দিয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে
একটা অতিসুক্ষ সময়ের মধ্যে
বিস্ফোরিত শক্তিভর কোয়ার্ক
কণা গঠণের মধ্য দিয়ে মৌলিক
বস্তকণা গঠণ করে। আর সে সময়ে
বিপুল তাপীয় অবস্থার সৃষ্টি হয় যা
আসে সেই ঘণিভূত শক্তিভরের
কিয়দংশ থেকে।এই হেড্রণিক ইরার
সমাপ্তি ঘটে ১০-৬ সেকেণ্ডে। শুরু
হয় লেপটনিক ইরা যার মেয়াদকাল
দশম সেকেন্ড পর্যন্তত। এই সময়ে
ব্স’ভরের যাবতীয় মৌলিক কণা
সুসংঘটিত হয়ে পদার্থ সৃষ্টির
প্রক্রিয়া শুরু করে। এই সময়ে
তাপমাত্রার বিপুল পরিবর্তন ঘটে।
মহাবিশ্বের জন্মকালে যে
তাপমাত্রা উত্থিত হয় তা হল ১০৩২
কেলভিন লেপটনিক ইরার শেষ
পর্যায়ে এসে সেই তাপমাত্রা
দাঁড়ায় ১০১০ কেলভিনে। আমরা
জানিনা প্রকৃত অবস্থা কি ছিল
তবে যৌক্তিক কারণে এখানে
একটা বাস্তব শূণ্যতা সৃষ্টি হয়,
তাছাড়াও আমরা কিছু পূর্বেই
দেখেছি ভ্রূণ মহাবিশ্বের
আয়তন,ঘনত্ব ও তাপীয় অবস্থার
গাণিতিক হিসাবেও নানাবিধ
জটীলতা দেখা দেয়। আমরা
জানি উত্থিত তাপমাত্রার হ্রাস
ঘটে বিকিরণের মাধ্যামে। বিপুল
পরিমান পদার্থের তাপমাত্রা
বিপুল সংখ্যায় উত্থিত করতে
তেমনি বিপুল তাপের যোগান
দিতে হবে,নতুবা বিস্ফোরণ
ঘটাতে হবে। যেভাবেই হোকনা
কেন সেই তাপমাত্রাকে দ্রুত
কমাতে হলে চাই দ্রুত বিকিরণ
ব্যাবস্থা আবার সেই বিকিরণের
জন্যে চাই চতুস্পার্শীয় পরিবেশ
যেখানে শোষিত হবে সেই তাপ;
আমরা তারও একটা অসামঞ্জস্যতা
লক্ষ্য করেছি। এছাড়া বিকল্প
পদ্ধতিতে তাপমাত্র কমানো
যেতে পারে উত্তপ্ত বস্তুকে
সম্প্রসারিত করে। ধরে নিচ্ছি
মহাবিশ্বের বেলায় তাই
ঘটেছিল। এখানে তাপমাত্রা
বৃদ্ধির সাথে আরেকটা বিষয়
সম্পৃক্ত তা হল বস্তুভর। কোন
সুক্ষাকৃতির বস্তুকে বহিঃশক্তি বা
বিস্ফোরণ-যে কোন পদ্ধতিতেই
এতটা উত্তপ্ত করার ব্যাপারটা
অত্যাধুনিক পদার্থ বিদ্যার
কাছেও ব্যাখ্যাশূণ্য; কারণ
বিজ্ঞানের জানামতে ধারন
ক্ষমতা বলে একটা বিষয় রয়েছে।
কোন রকম অলৌকিকতাকে প্রশ্রয়
দেওয়া যাবেনা বলেই এতসব
অসামজস্যতা এসে ননারকম
জটীলতার সৃষ্টি করছে।
এবার আসা যাক রেডিএটিব
ইরাতে,এটি একটি বিশাল পর্যায়
কাল। এপর্যায়ের শেষে এসে
মহাবিশ্বের ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য
ভাবে হ্রাস পায়। তাতে
তাপমাত্রার যে নিম্ন মুখিতা, তা
ব্যয়িত সময়ের সঙ্গে উপরে
উল্লেখিত অন্য দুই ইরার সাথে
সঙ্গতি পূর্ণ নয়। এখানে
আমাদেরকে অবশ্যই একটা কথা মনে
রাখতে হবে যে, মহাবিশ্ব যে
পরিমান শক্তি ভর নিয়ে যাত্রা
করেছিল,এপর্যন্ত আসতে আসতে
তার কিন্তু একতিলও বাড়েনি বরং
বিকিরণে তার পরিমান কমেছে
ফলে দেখাদিচ্ছে বস্তুভরের
ঘাটতি। ইতিপূর্বে আমরা
দেখেছি ভ্রূণ মহাবিশ্বের
বস্তুভরের অসামঞ্জস্যতা।
মহাবিশ্বের জন্ম হয়েছিল
অতিক্ষুদ্র এক অকল্পনীয় আয়তন
নিয়ে। যে বস্তুভর থেকে আজকের
মহাবিশ্ব তৈরী হওয়া নিছক
পাগলামী চিন্তা। সেই ভ্রূণ
মহাবিশ্বকে স্বীকৃতি দিলে অবশ্যই
একটি যোগানদাতাকে স্থান করে
দিতে হবে নতুবা মহাবিশ্ব একদিন
আপনাতেই বস্তুশূণ্য হয়ে পড়বে।
তাত্ত্বিক ভাবে
বিজ্ঞান,যোগান দাতাকে
স্বীকার না করলেও তার পরীক্ষা
পর্যবেক্ষণ কিন্ত ভিন্ন কথা বলে!
তারপর শুরু হয় ষ্টেলার ইরা যার বয়স
অদ্যাবদি পর্যন্ত ১৫বিলিয়ন বছর।
এখানে এসে তাপমাত্রা ১০৪
থেকে কমে বর্তমানে ২.৭
কেলভিনে দাঁড়ায়। এ ক্ষেত্রে
তরাণ্বিত সম্প্রসারণ ও সময়ের
ব্যাবধান উল্লেখ যোগ্য; ফলে
এখানকার ক্রমহ্রাস আরো
উল্ল্যেখযোগ্য হারে হওয়া উচিৎ
ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি
হয়েছে প্রকৃতির প্রয়োজন মত।
এখানে বিজ্ঞানের আরেকটা
স্বীকারোক্তি উল্লেখ করা
প্রয়োজন-‘বিংশ শতাব্দীতে
বিজ্ঞানের শ্লোগান হল,মহাবিশ্ব
অত্যাবশ্যকীয় ভাবে প্রাকৃতিক
নিয়মকানুনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে
যার প্রমান প্রকৃতিতে আজো
সন্ধান করে পাওয়া যায়।’ আমরা
চলতি আলোচনায় দেখতে পাচ্ছি
এই শ্লেগানের ব্যত্যায় ঘটছে।
মহাবিশ্ব গঠণের বিজ্ঞান সম্মত
ব্যাখার মধ্যে প্রকৃতির নিয়ম
কানুণে পরিপূর্ণ পরিস্ফূটণ ঘটছেনা;
তাহলে আইষ্টাইনের সেই মহাসূত্র
ব্যাখ্যা শূণ্য হয়ে পড়তোনা আর
আমাদের অনুভুতিতেও অবিশ্বাস্য
কোন ধারনার জাগতোনা।
আজকের বিশ্ব যেভাবে আছে,যা
তার ধর্ম ও বৈশিষ্ট,জগৎ
বিজ্ঞানীদের হিসেবের খাতায়
জন্ম থেকে ঠিক সেভাবেই ধরা
দিত।
এতদ অসঙ্গতি থাকা সত্যেও
মহামতি কাজী জাহান মিয়া
কোন কোন ক্ষেত্রে পবিত্র
কোরআনের ববহারিক মর্মার্থের
ভিন্নতায় তার (কোরআনের) সুপ্ত
চেতনাকে জাগ্রত করে কোরআনে
বর্ণিত মহাবিশ্বের সৃষ্টি রহস্যকে
বিজ্ঞান দ্বারা অনুমোদিত
করিয়েছেণ। তা অতীব আধুনিকতার
দাবীদার।কোরআনের বক্তব্যকে
পরিস্ফূটনের মাধ্যামে
বিজ্ঞানের কাছে তুলে ধরার
প্রয়াস এক যুগান্তকারী ঘটনা।
অনুভূতির বিচারে এ যেন মানুষের
কাছে কোরআনের আলো সূর্যের
আলোর তীব্রতায় পৌঁছে দেওয়া।
ইসলামের ইতিহাসে এ এক মাইল
ফলক। এ্ই সূত্রে আমি ডঃ মরিস
বুকাইলিকে তার অনবদ্য সৃষ্টি
বাইবেল কোরআন ও বিজ্ঞান
গ্রন্থের মত একটা প্রলয়ঙ্করি জ্ঞান
বর্তিকার জন্ম দিয়েছেন বলে
আমার আন্তরিক অভিনন্দন জ্ঞাপন
করছি।তবে এখানে একটা বিষয় না
বললেই নয় যে,পবিত্র কোরআনকে
বিজ্ঞানের আঙ্গিকে ভাবার
কোন সুযোগ নেই;কারণ কোরআন
বিজ্ঞানের তত্ত্ব বা তথ্যের উপর
ভিত্তি করে রচিত হয়নি।
বিজ্ঞানের ঊষালগ্নেই কোরআন
বিজ্ঞানের নানা তত্ত্বকে
নিজেরমত করে ধারন করে
রেখেছে। প্রতিদিন সুরেলা
কন্ঠে আপনমনে শুধু পাঠ করেই
চলেছি;তার মর্মবাণী উপলব্দি
করতে পারিনি। এখন যদি তাকে
বিজ্ঞানের আলোকে সাজাতে
চাই তা হবে আমাদের
দৃষ্টতা;পিবত্র কোরআন স্ব-মহিমায়
উদ্ভাসিত।আমরা জানি কোরআন
এসেছিল এমনি এক যুগে যখন
পৃথিবীর মানুষ ছিল
প্রায়ান্ধকারে, জ্ঞানের
বর্তিকা তখল ছিল নিবু
নিবু,বিজ্ঞান জগৎ তখন সবে প্রসূত।
বিশেষ করে আকাশের দিকে
তাকিয়ে তখন মানুষ নানা কল্প
কাহিনী রচনার প্রয়াস পেত, চন্দ্র,
সূর্য গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে মানুষের মনে
ছিল নানা কল্পণা। ঠিক সেই
সময়ে পবিত্র কোরআন এল মানুষকে
আকাশ বিজ্ঞান শিক্ষা দিতে।
বর্ণিত হল নানা মহাবাণী। যেন
আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল
আকাশের কোটি কোটি তারকা।
অনেক পথের সন্ধান দিল। জ্ঞানের
ম্রিয়মান প্রদীপখানি আবার দপ
করে জ্বলে উঠলো। সেই আলোয়
মানুষ নতুন করে তার জ্ঞানচর্চাকে
এগিয়ে নিতে লাগলো। কোরআন
হয়ে উঠল এক মহাগুরু। শিক্ষকের
শিক্ষক। ধীরে ধীরে বিজ্ঞান
তার স্থান করে নিল মানুষের
মাঝে। তার প্রতিটি শূণ্যতাকে
কোরআন দিল পরিপূর্ণ করে।
বিজ্ঞান অতি দ্রুততার সাথে
মহাশূণ্যের নবদিগন্তে উড়তে
লাগলো। উড়তে উড়তে আজ সে এই
বিশাল সাম্রাজ্যের শিক্ষক হয়ে
দাঁড়িয়েছে। তার জ্ঞানের
ভাণ্ডার পূর্ণ হতে চলেছে। তাই
বলে কি আজ তারই বয়োবৃদ্ধ
শিক্ষাগুরু পবিত্র কোরআনকে
অনুমোদন দানের স্পর্দা রাখে! না,
রাখেনা বরং যুগে যুগে
বিজ্ঞানের নানা আবিস্কারকে
কোরআন তার বিজ্ঞতা ও অভিধা
দিয়ে অনুমোদন দিয়ে এসেছে।
নীরবে নিভৃতে তার বাণীগুলি
বিজ্ঞানের জয়যাত্রায় অনুরণ
তুলেছে। সকালে সন্ধ্যায় সুমধুর সূরে
শুধু আবৃতি করেছি কিন্তু মন দিয়ে
শুনিনি তার মর্মবাণী!
সূধী পাঠক;আজ এ পর্যন্তই;মহান
আল্লাহ্ চাইলে আমরা পরবর্তী
প্রবেন্ধ দেখবো পবিত্র কোরআন
বিজ্ঞানের সৃষ্টি তত্ত্বকে
আংশিক হলেও অনুমোদন দিয়েছে।
মঙ্গলবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৫
Sidebar
Search
-
স্যাট / এসএটি (SAT) কি? আমেরিকান আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হতে গেলে আপনার এসএটি (বা স্যাট) দেওয়া থাকতে হবে। এসএটি’র স্কোর...
-
গত পোস্টে বলেছিলাম হকিং এবং ডারউইন কিভাবে তেনা পেচীয়েছিলেন। নাস্তিকরা বলছে ০ থেকেই সব কিছু হয়েছে। আমি প্রমাণ করে দিয়েছি যে, ০ থেকে কোনদিনই ক...
-
আজ আমরা এন্ড্রয়েড সম্পর্কে প্রাথামিক ধারনা এবং ডেভেলপমেন্ট এর জন্য প্রয়োজনীয় টুল সম্পর্কে জানব। এন্ড্রয়েড(ইংরেজি: Android) হল মোবাইলে...
-
আমারা বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের জীবন এক সেকেন্ডের জন্য ও চিন্তা করতে পারি না। আর এই বিজ্ঞানের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনি স হলো গণিত। আজকে একটি A...
-
নিয়ে এলাম কিছু হাজার টাকার বই Fundamentals of Mathematical Statistics by S C Gupta GRE The Official Guide to the Revised General Test, Sec...
-
Whats App এখন অনেকটাই Facebook এর মতই জনপ্রিয়। কিন্তু আমরা অনেকেই চাই না অন্যকে নিজের পারসোনাল নাম্বার টা অন্য কেউ জানুক। বিশেষ করে মেয়ে...
-
DU IBA BBA /MBA, GRE ইত্যাদি এর প্রয়োজনীয় সকল বই এবং গুরুত্ব পূর্ণ লিংক শুধু লেখা গুলোর উপর ক্লিক করুন ETS official Guide 2nd edition ...
-
নিউরনে অনুরণন ▬▬▬▬▬▬ஜ ۩۞۩ ஜ▬▬▬▬▬▬ মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা পৃথিবীর সেরা। কিন্তু আমি যখন দেখি তাদের সৃজনশীলতাকে পুর...
-
Fibonacci’s series এর গোল্ডেন রেশিও দিয়ে আল্লাহহর অস্তিত্ব প্রমাণ। আমাদের দেশে বিখ্যাত বিখ্যাত গণিতবিদ আছেন। যারা আল্লাহকে মানেন না। নিজে...
-
BIG-BANG Theory & AL-QURAN অনেক দিন আগে বিগ ব্যাজ্ঞ থিউরি নিয়ে কথা বলেছিলাম।মাঝখানে বলেছিলাম যে কোরআন এও এই সম্পর্কে বলা আছে। যাই হো...
Popular Posts
Unordered List
Text Widget
Pages
এবার প্রযুক্তি হোক বাংলা ভাষায়। নিজের ভাষায় চিৎ কার করে বলুন আমি প্রযুক্তিকে ভালবাসী। আর আপনার সেই ভালোবাসাকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে ব্লগ ৭১ আপনাদের পাশে ছিল আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ
www.facebook.com/shawon182. Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Sample Text
Comments
Labels
About Me
Contact Us
Popular Posts
-
স্যাট / এসএটি (SAT) কি? আমেরিকান আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে ভর্তি হতে গেলে আপনার এসএটি (বা স্যাট) দেওয়া থাকতে হবে। এসএটি’র স্কোর...
-
গত পোস্টে বলেছিলাম হকিং এবং ডারউইন কিভাবে তেনা পেচীয়েছিলেন। নাস্তিকরা বলছে ০ থেকেই সব কিছু হয়েছে। আমি প্রমাণ করে দিয়েছি যে, ০ থেকে কোনদিনই ক...
-
আজ আমরা এন্ড্রয়েড সম্পর্কে প্রাথামিক ধারনা এবং ডেভেলপমেন্ট এর জন্য প্রয়োজনীয় টুল সম্পর্কে জানব। এন্ড্রয়েড(ইংরেজি: Android) হল মোবাইলে...
-
আমারা বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের জীবন এক সেকেন্ডের জন্য ও চিন্তা করতে পারি না। আর এই বিজ্ঞানের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনি স হলো গণিত। আজকে একটি A...
-
নিয়ে এলাম কিছু হাজার টাকার বই Fundamentals of Mathematical Statistics by S C Gupta GRE The Official Guide to the Revised General Test, Sec...
-
Whats App এখন অনেকটাই Facebook এর মতই জনপ্রিয়। কিন্তু আমরা অনেকেই চাই না অন্যকে নিজের পারসোনাল নাম্বার টা অন্য কেউ জানুক। বিশেষ করে মেয়ে...
-
DU IBA BBA /MBA, GRE ইত্যাদি এর প্রয়োজনীয় সকল বই এবং গুরুত্ব পূর্ণ লিংক শুধু লেখা গুলোর উপর ক্লিক করুন ETS official Guide 2nd edition ...
-
নিউরনে অনুরণন ▬▬▬▬▬▬ஜ ۩۞۩ ஜ▬▬▬▬▬▬ মুহম্মদ জাফর ইকবাল আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা পৃথিবীর সেরা। কিন্তু আমি যখন দেখি তাদের সৃজনশীলতাকে পুর...
-
Fibonacci’s series এর গোল্ডেন রেশিও দিয়ে আল্লাহহর অস্তিত্ব প্রমাণ। আমাদের দেশে বিখ্যাত বিখ্যাত গণিতবিদ আছেন। যারা আল্লাহকে মানেন না। নিজে...
-
BIG-BANG Theory & AL-QURAN অনেক দিন আগে বিগ ব্যাজ্ঞ থিউরি নিয়ে কথা বলেছিলাম।মাঝখানে বলেছিলাম যে কোরআন এও এই সম্পর্কে বলা আছে। যাই হো...
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন